সাংবাদিক থেকে সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির পুরস্কার বিজেতা পরিচালক মুখোমুখি জনতার কথার
সৌম্যদীপ ঘোষ চৌধুরী, বহুল প্রচারিত সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বিনোদন বিভাগে সাংবাদিকতা করতে করতে সিনেমা বানানোর প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। সেই ভালোবাসার টানেই সাংবাদিকতা ছেড়ে ২০১৭ থেকে এখনও অবধি ছবি নির্মাণেই নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। সম্প্রতি গোল্ডেন মিরর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির পুরস্কার জিতে নিল তাঁর এলএসসি। এলএসসি দিয়ে শুরু করে, সাংবাদিক থেকে চিত্র পরিচালক হয়ে ওঠার জার্নি ফোন-ইন্টারভিউতে জনতার কথা-র সায়ন্তন সেনের সঙ্গে শেয়ার করলেন সৌম্যদীপ।জনতার কথাঃ আপনার ছবি গোল্ডেন মিরর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির পুরস্কার জিতে নিল। যেখানে গৌতম ঘোষের মত একজন ফিল্মমেকার উপস্থিত ছিলেন। সেখানে পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতিটা কেমন ছিল?সৌম্যদীপঃ যে কোনও ফেস্টিভ্যালে পুরস্কার পাওয়া ব্যাপারটা খুবই ইন্টারেস্টিং। ভালোই লাগে। পুরস্কারের থেকে বড় জিনিস হল ছোট ছবি দেখা এবং দেখানোর পরিসরটা তো খুব একটা বেশি নেই। বাংলা ছবির ক্ষেত্রে সেটা খুবই কম। এই ছোট-বড় যে কোনও ফেস্টিভ্যালে এই ছোট ছবি দেখা এবং দেখানোর যে পদ্ধতি থাকে সেটা সবসময়ই খুব ভালো লাগে। গৌতম ঘোষের মতো একজন সিনিয়র পরিচালক যখন এরকম একটা ফেস্টিভ্যালে থাকেন এবং বসে ছবি দেখেন সেটা একটা আলাদা অনুভূতির জায়গা। এঁরা ছোট ছবিকে ছোট পর্যায়ে রাখেন না। এঁদের প্রেসেন্সেটা পরিসরটাকে অনেকটা বড় করে তোলে।পুরস্কার বিতরনজনতার কথাঃ এলএসসি নিয়ে যদি সংক্ষেপে কিছু বলেন...সৌম্যদীপঃ এটার ফুল ফর্ম লাইক, শেয়ার, কমেন্ট (Like, Share, Comment)। সেটাকেই শর্ট করে এলএসসি করা হয়েছে। ইট সাউন্ডস লাইক এলএসডি। এলএসডি যেমন একটা ড্রাগ হয় তেমনই লাইক, শেয়ার, কমেন্টটাও এই জেনারেশনের কিছু মানুষের কাছে খানিকটা ড্রাগের মতোই পৌঁছাচ্ছে। সেটার কি কি খারাপ দিক আছে এবং সেটা কতটা খারাপ হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়ার সেই জার্নিটা নিয়েই পুরো কাহিনীটা তৈরি করা। আগে কুকুরকে আমরা চেন দিয়ে বেঁধে রাখতাম। এখন ফোনের চার্জারের তারটা আমাদের সুইচবোর্ডের সঙ্গে বেঁধে রাখে। এই ছবির গোটা কনসেপ্টটাই এটা নিয়ে।জনতার কথাঃ ছোট ছবি মানেই ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম। আপনারটাও নিশ্চয় সেটাই...সৌম্যদীপঃ ছোট ছবি মানেই বেশিরভাগ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি, কিন্তু এটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি না। এলএসসির প্রযোজক সোমনাথ দে। উনি আপাদমস্তক একজন কর্পোরেট মানুষ, দীর্ঘদিন ভারতের বাইরে কাটিয়ে দেশে ফিরে দেশের মানুষের জন্য কিছু করার উদ্যোগে নিচ্ছিলেন, আই অ্যাম ফরচুনেট যে, ওনার সঙ্গে সেই মুহূর্তে আমার দেখা হয়। এটা তারও প্রথম প্রযোজনা। আর এটা পুরোটাই বানানো হয়েছে হিন্দিতে। বাংলা শর্ট ফিল্ম করলে দর্শক তো পাওয়া যায় না, বিক্রি করারও জায়গা পাওয়া যায় না। কিন্তু হিন্দিতে শর্ট ফিল্ম করাতে কেনার পরিসরটা অনেকটা বড় এবং ডিস্ট্রিবিউশনটাও ভালো হয়। আমি লাকি যে সোমনাথ দে এই ছবি প্রযোজনা করতে রাজি রয়েছেন এবং তাঁর কাছে মনে হয়েছে এটা সমাজের জন্য খুব দরকারি একটা ছবি। প্রযোজক খুব সাপোর্ট করেছেন।জনতার কথাঃ এই ছোট ছবিটা কতক্ষণের এবং কে কে অভিনয় করেছেন?সৌম্যদীপঃ এটা ১৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের। মূল চরিত্রে প্রশান্ত সূত্রধর। এছাড়া রয়েছেন স্বস্তি দাস, মৌমিতা বি বোস।পরিচালক ও প্রযোজক সোমনাথ দেজনতার কথাঃ বাংলাতে বিগত দু-তিন বছরে অনেক শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হচ্ছে। এই শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উপযোগিতা কতটা রয়েছে বা স্বচ্ছতা কতটা আছে?সৌম্যদীপঃ বাংলায় অনেক শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হচ্ছে। তার একটা ভালো দিকও আছে। আবার একটা খারাপ দিকও আছে। ভালো দিক হল প্রচুর কন্টেন্ট তৈরি হবে। আবার প্রচুর আবোল-তাবোল কন্টেন্টও তৈরি হবে। গুণগত মানটাও কমে যায়। লকডাউনে আমি এরকম অনেক ছবি দেখেছি যারা কেউ প্রপার ফিল্মমেকার না। ফলে কোয়ালিটি ফল করছে। আর স্বচ্ছতার কথা বললে আমি খুব সহজভাবে বলি সব ফেস্টিভ্যালের খুব স্বচ্ছতা থাকে না। অস্বচ্ছতা বেশিরভাগ ফেস্টিভ্যালেরই আছে, তবে সব ফেস্টিভ্যালেরই যে আছে এমনটাও বলতে পারছি না। শর্টকাট ওয়েতে একটা অ্যাওয়ার্ড হয়তো পাওয়া যেতে পারে কিন্তু তাতে ভালো ছবি হয় না। কোনও ছবি বানানোর পর আমি যদি অ্যাওয়ার্ডের জন্য কাউকে রিকোয়েস্ট করি তার মানে সেই ছবির গুণগত মান ভালো হয়নি বলেই কিন্তু আমি রিকোয়েস্ট করছি। সেরকম একটা ছবি ফেস্টিভ্যালে পাঠানো ঠিক না। তাহলে শিল্পের গুণগত মান পড়বে বলেই আমার ধারনা। অ্যাওয়ার্ড পাওয়াটাই যদি মূল উদ্দেশ্য হয় সেটা খুব একটা ভালো ব্যাপার নয়।জনতার কথাঃ আপনার আপকামিং আর কি কি ছবি আসছে?সৌম্যদীপঃ আমার একটা ফিট অ্যান্ড ফো ছবি হল। যেখানে ক্যাকটাসের সিধু দা এবং সায়নী দত্ত অভিনয় করেছেন। এটা ৩০ মিনিটের একটা শর্ট এবং এটাই আমার শেষ শর্ট ফিল্ম। আমি এখন ফিচার ফিল্ম ও ওয়েব সিরিজের দিকে মন দিয়েছি।জনতার কথাঃ পেজ থ্রি জার্নালিস্ট থেকে পরিচালনায় আসায় কোনও সুবিধা কি পেয়েছেন?সৌম্যদীপঃ সুবিধা তো পেয়েছি। কন্ট্যাক্ট তৈরি হয়েছে। নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীকে আমি নাওয়াজ বলে ডাকতে পারি। ওর সঙ্গে একটা ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে। আদিল হুসেন, পঙ্কজ ত্রিপাঠীর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব তৈরিই হত না আমি টাইমস-এ চাকরিটা না করলে। সাংবাদিক থেকে ফিল্ম ডিরেক্টর হওয়ায় সাংবাদিক পরিমণ্ডলে থাকা আমার সাংবাদিক বন্ধুরা আমাকে খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছে।গৌতম ঘোষ ও পরিচালক সৌম্যদীপজনতার কথাঃ শেষ প্রশ্ন, আগামি দিনে কি সাংবাদিকতায় ফেরার ইচ্ছে রয়েছে আপনার?সৌম্যদীপঃ না সেরকম ইচ্ছে নেই। পরিচালনা করছি, বই লিখছি এটাই ঠিক আছে। বইমেলায় আমার নতুন বইও প্রকাশ পাচ্ছে।